Friday 20 May 2016

The Shawshank Redemption

‘সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা, আশা তার একমাত্র ভেলা’। কথাটি চরমভাবে সত্য। কোনো জীবনে যদি আশা-ই না থাকে তাহলে সে জীবনের কোনো মূল্য থাকে না, কোনো স্বপ্ন থাকে না। আশা এমন একটি বিষয় যাকে বিশ্বাস করে সামনের পথে এগিয়ে চলা উচিত। তাহলেই একটি জীবনের চরম সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব। আশায় বিশ্বাস না করলে সে জীবনকে প্রকৃত জীবন হিসেবে উপভোগ করা যায় না। খেয়াল করে দেখবেন যে ব্যক্তি আশায় বিশ্বাস করে না বা যার জীবনে কোনো আশা নেই সে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্থ। তার জীবনে কোনো স্বপ্ন বাসা বাঁধে না। সে জীবিত থেকেও মৃত। তাই প্রতিটি মানুষেরই জীবনকে উপভোগ করার জন্য আশায় বিশ্বাস করা উচিত, স্বপ্ন দেখা উচিত।
জীবনের সব আশাকে জীবনের কোন এক সময় হলেও বাস্তবে রূপদান করা প্রতিটি মানুষের সুপ্ত আশা থাকে। "দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান" হল সেই আশা, বাস্তব এবং জীবনের মানে কি তা খুজে বেড়ানোর নাম। জীবনে হার না মানার এক মূর্ত প্রতিচ্ছবির নাম "দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান”"
"দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান” শুধু একটি চলচিত্র নয়, বাস্তবতার অন্য নাম "দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান।" মিথ্যা মামলায় জীবনের অনেক গুলো বছর হারিয়ে যাবার নাম "দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান।" জেল খানায় প্রতি পদে পদে অপমান এবং নির্যাতনের অপর নাম "শশাংক রিডাম্পশন।" জীবনকে নতুন ভাবে খুজে পাওয়ার পরও সেখান থেকে বের হতে না পারার নাম "দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান।" জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় একটি বন্দীশালায় থেকে শেষ জীবনে হতাশার সাথে জীবন থেকে পালিয়ে যাবার নাম "দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান।" "দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান" একটি নাম কিন্তু নামের দিকগুলো বহুমাত্রিক।
ফ্রাঙ্ক ডারাবণ্ট পরিচালিত ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ মুভির প্রতিপাদ্য হতাশাগ্রস্থ জীবন, মুক্তির স্বপ্ন আর আত্মার স্বাধীনতা। কাহিনী তেমন কিছু না যদি এভাবে বলি-
"১৯৪৭ এ ব্যাংকার এ্যান্ডি ডুফ্রেন্স এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে তার স্ত্রীকে এবং তার স্ত্রীর প্রেমিক কে খুন করার। উকিলের সামনে অভিযোগ প্রমানে ব্যার্থ হওয়াতে তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। পাঠিয়ে দেয়া হয় শশাঙ্কের কারাগারে। ওয়ার্ডেন নর্টন মানুষরূপী নরপিশাচ। তার ডানহাত ক্যাপ্টেন হ্যাডলি। সাথে যুক্ত হয়েছে হে-উড এর পাশবিক লালসা এবং তার গ্যাং। এত কিছুর ভিড়েও এ্যান্ডি খুজে পায় বন্ধু রূপে অমুল্য রত্ন ‘রেড’কে । তার সাহায্যে একটি পাথর খোদাই করার হাতুরিও পায় এ্যান্ডি। কিন্তু কি করবে সে এই হাতুরি দিয়ে? রেড তো আগেই তাকে বলে দিয়েছে কারাগারের পাথুরে দেয়াল খোদায় করতে ৬০০ বছর লেগে যাবে।" বাকিটা মুভিতে।
"দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান" কে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিশ্লষন করি তাহলে দেখা যাবে মুভির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে জেল খানার থেকে বের হবার পরের জীবন, জেলে অবস্থানকালীন জীবন এবং জীবনের সংজ্ঞা।
জেলে খানার জীবন আসলেই প্রতিটি মানুষের কাছে কষ্টকর। অনেকেই সেখানে আসে, কেউ গুরুতর অপরাধ করে কেউ বা মিথ্যা মামলায় আসামী হয়ে। "দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান" মুভিতে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে সেই সব অন্ধকার দিকে যেখানে প্রতিদিন শারীরিক এবং মানষিকভাবে নির্যাতিত হতে হয় এইসব আসামীদের।
"দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান" হল ক্রাইমের একটি মাস্টারপ্ল্যান মুভি। ক্রাইম কি, কি করে করতে হয় আর একটি পারফেক্ট ক্রাইম কিভাবে আসল দোষীদের বের করে নিয়ে আসতে পারে তার প্রতিমূর্তি হল "দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান।" নিজের ইচ্ছা শক্তির কাছে কোন কিছুই যে বাধা হিসাবে দাড়াতে পারে না তা এ্যান্ডি ডুফ্রেন্স এর মাস্টার প্ল্যান বলে দেয়।
"দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান" হল বন্ধুত্বের চলচিত্র। জীবনের শেষ সময়ে যখন রেড হতাশ হয়ে যায় চলে যায় তার বহুদিনের জেলখানার বন্ধুর কাছে। তার দেওয়া কথা সে ঠিক মতই মনে রাখে।
"দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান" জীবনের হতাশা থেকে মুক্তি না পেলে মানুষ নিজেকে কি করে নিঃশেষ করে ফেলে তার উপর আলোকপাত করেছে। ৫০ বছর একটি মানুষ জেলখানাতে কাটিয়ে ফেললে তার জীবনে আর কি আছে? কোন যুক্তিতে তাকে তখন এই নিষ্টুর জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তখন এই মুক্ত জীবন কি তার নিকট সব থেকে বড় শাস্তি হয়ে দাঁড়ায় না? যে মানুষের নিকট ইটের দেওয়াল ছিল সব থেকে বড় শত্রু, একসময় এই ইটের দেওয়ালের মায়াতে সে বাধা পড়ে যায়। মুক্ত জীবন তার নিকট হয়ে যায় সব থেকে বড় শাস্তি। ব্রুক্স যখন ৫০ বছর পরে এই নরক থেকে প্যারোলে ছাড়া পেলো সে একটি চিঠি লিখে রেড কে, সেই চিঠিতে এদিক টি খুব বেশি ফুটে উঠে। চিঠিতে ছিল -
“বন্ধুরা, বহিঃবিশ্ব যে এতটা গতিময় তা বিশ্বাস হতে চায় না। যখন ছোট্ট ছিলাম, তখন একবার একটা গাড়ি দেখেছিলাম আমি। কিন্তু এখন… গাড়িতে ভরে গিয়েছে শহর। পুরো পৃথিবীটাই যেন অনেক ব্যাস্ত। প্যারোল বোর্ড আমাকে যে বাড়িতে থাকার জায়গা দিয়েছে তার নাম ‘ব্রিউয়ার’। একটি চাকরীও দিয়েছে সাথে গ্রোসারীতে পন্য ব্যাগে ভরে দেবার। কঠিন কাজ, তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু জানো তো বয়স হয়েছে; হাত প্রায়শই ধরে আসে। ম্যানেজার আমাকে খুব একটা পছন্দ করে বলেও মনে হয় না বৃদ্ধ বলে। কাজ শেষে মাঝে মাঝে পার্কে যাই পাখিদের খাওয়াতে। আর ভাবি ‘জেড’ (পোষা কাক) আকাশে উড়তে উড়তে কোনোদিন আমাকে খুজে পাবে। সে যেখানেই থাকুক, আশা করি ভাল আছে আর নতুন অনেক বন্ধুও জুটিয়েছে। রাতে ঘুম আসে না আমার; ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখে জেগে উঠি। মাঝে মাঝে ভুলে যাই কোথাই আছি। ইচ্ছে করে একটা পিস্তল জোগার করে দোকানে ডাকাতি করি যাতে তারা আমাকে আবার আমার বাসাতে ফেরত পাঠায়। সাথে যদি ম্যানেজারকেউ খুন করতে পারতাম! কিন্তু বড় বেশি বৃদ্ধ হয়ে গেছি আমি এমন কাজ করতে। এখানে থাকতে ইচ্ছে করে না, সব সময় ভয় পেতে পেতে আমি ক্লান্ত। ঠিক করেছি… আর থাকব না। মনে হয় না কারো কিছু এসে যাবে এই বুড়ো মানুষটার জন্য”

"দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান" নিয়ে আসলে বলার অনেক কিছুই আছে আবার কিছু নেই। কিছু কিছু মুভি আছে যাকে নিয়ে বলা যায় না, যার ভালোলাগা ব্যাক্ত কর যায় না। মনে হয় কি বললাম, আসলেই বলতে পেরেছি কি? মুভিটি অস্কার পায়নি তো কি হয়েছে, ২২ বছর ধরে মানুষের ভালোবাসা পেয়ে এসেছে জানি সামনের দিনগুলোতেও পাবে। "দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান" এর তুলনা শুধু সে নিজে। "দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান" কালজয়ী সংলাপগুলো আসলে এক কথায় অনিন্দ সুন্দর। জীবনে হতাশ যখন গ্রাস করে তখন মনে পড়ে যায় -
➔ “Remember, Red, hope is a good thing, maybe the best of things. And no good thing ever dies.”
➔ "Get busy living, or get busy dying."
➔ "They say it has no memory. That's where I want to live the rest of my life. A warm place with no memory."
এইসব বিখ্যাত সংলাপগুলো। আমার কাছে "দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান" হল ভালোবাসার চলচিত্র, বন্ধুত্বের চলচিত্র, জীবনে হার না মানার চলচিত্র। "দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশান" একটি চলচিত্র কিন্তু চলচিত্রের চিত্রগুলো একক নয়, ছড়িয়ে গিয়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।
➔ ডাউনলোড লিংকঃ https://kat.cr/the-shawshank-redemption-1994-720p-brrip-x26…

 Abdullah Al-Manee

LIVE FROM DHAKA | ABDULLAH MUHAMMAD SAAD | MEDIASCOPE

LIVE FROM DHAKA “ আমি কোন নবি-রাসূল নয়, আমি একটা মানুষ, আমার সহ্যের একটা লিমিট আছে।“ -       সাজ্জাদ  (লাইভ ফ্রম ঢাকা) আমাদের ...